আইন সবার জন্য সমান
আইন সবার জন্য সমান
শাহেনশাহ ছিলেন অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণ শাসক। তিনি তার প্রাসাদের প্রবেশদ্বারে একটি বালিঘড়ি রেখেছিলেন। যার কাছে অভিযোগ ছিল সে সেই ঘন্টাটি বাজিয়ে দিতে পারে যাতে সম্রাট কণ্ঠস্বর শুনতে এবং ন্যায়বিচার করতে পারে। তার রাজত্বে গরীব-ধনী, ছোট-বড় সবার প্রতি ন্যায়বিচার করা হতো। সম্রাটের দৃষ্টিতে আইন ছিল সবার জন্য সমান। সম্রাট অপরাধীকে শাস্তি দিয়ে এবং নিরপরাধকে ক্ষমা করে সবার প্রতি ন্যায়বিচার করতেন। বিচারের জন্য অনেকে সম্রাটের দরবারে তাদের অভিযোগ আনতেন। নূরজাহান শুধুমাত্র নির্বাচিত লক্ষ্যবস্তুতে তীর নিক্ষেপ করেন। অনুশীলন করার সময় নদীর দিকে বাতাসে একটি তীর ছুড়েছিল, যা কোথাও পড়েছিল। এরপর নুরজাহান তার প্রাসাদে ফিরে আসেন। প্রহরী দেখলেন একজন ধোপা কান্না করছে। তার একটি মৃতদেহ মাটিতে পড়ে ছিল এবং তার হাতে রক্তে মাখা একটি তীর ছিল। প্রহরী সেই ধোপাকে সম্রাটের কাছে নিয়ে গেল। ধোবন সম্রাটকে সালাম করে ন্যায়বিচারের জন্য কাঁদতে লাগলেন। সম্রাটকে তীর দেখিয়ে বললেন, হুজুর, এই তীর দিয়ে কেউ আমার স্বামীকে হত্যা করেছে, আমাকে বিধবা করেছে এবং আমার সন্তানদের এতিম করেছে। এখন আমার ও আমার সন্তানদের কে দেখবে।' সম্রাট সেই তীরটি তুলে দেখলেন, তাতে রাজকীয় সীলমোহর ছিল। সম্রাট বুঝতে পেরেছিলেন নিশ্চয়ই কোনো প্রাসাদের কোনো ব্যক্তি এই দুঃখজনক ঘটনা ঘটিয়েছে। তিনি প্রহরীকে নির্দেশ দিলেন, "যেদিন এই ঘটনা ঘটেছিল সেদিন কে তীরন্দাজ অনুশীলন করছিল?" রাজার আদেশ পেয়ে প্রহরী রাজপ্রাসাদে গেলেন এবং সত্য জেনে কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে বললেন, 'হুজুর, সেদিন বেগম সাহেবা তীরন্দাজ করছিলেন।' সম্রাট তৎক্ষণাৎ নুরজাহানকে দরবারে ডাকলেন।
নূরজাহান দরবারে হাজির হওয়ার সাথে সাথে সম্রাট তার কোমরবন্ধ থেকে একটি ছুরি বের করে ধোপাকে দিয়ে বললেন, 'নূরজাহানের কারণে তুমি বিধবা হয়েছ, তাই তুমি আমাকে এই ছুরি দিয়ে হত্যা কর। নুরজাহান বিধবা। এতে করে আপনি অবশ্যই ন্যায়বিচার পাবেন। রাজার বিচার শুনে ধোবন খুবই লজ্জিত হয়ে বলল, হুজুর, তোমাকে হত্যা করে আমার স্বামী বেঁচে থাকবে না। তাহলে তোমার মত একজন ন্যায়পরায়ণ রাজাকে হত্যা করার পাপ আমি কিভাবে করব।' ধোবনের কথা শুনে সম্রাট খুব খুশি হলেন এবং রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে তাকে আর্থিক সাহায্য করলেন। ধোবন সম্রাটকে আর্থিক সাহায্যের জন্য ধন্যবাদ জানাতে তার বাড়িতে গেল। সেই মহিলা যদি তোমার আদেশ মানত, তাহলে মহা বিপর্যয় ঘটত।' সম্রাট বললেন, আমি যদি মরে যেতাম, তাহলে ওই নারী ন্যায়বিচার পেত। একটা কথা মনে রাখতে হবে, আইন সবার জন্য সমান।'
শিক্ষা এই গল্পটি আমাদের শেখায় যে, আইনের চোখে কেউ ছোট বা বড় নয় কিন্তু সবাই সমান।
