প্রতারকের শেষ
প্রতারকের শেষ
কোথাও একটা বিশাল পুকুর ছিল। সেখানে এক বৃদ্ধ বগলাও বাস করত। বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। এ কারণে তিনি মাছ ধরতে পারেননি। পুকুর পাড়ে বসে সে চোখের জল ফেলত। বগলাকে মন খারাপ দেখে জিজ্ঞেস করল, 'মা, কাঁদছ কেন? আজকাল খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়েছ?...হঠাৎ কি হল?' বগলা বলল- 'বাছা, আমি এই পুকুরের কাছে জন্মেছি। এতদিন এখানেই কাটিয়েছি। এখন শুনলাম এখানে বারো বছর বৃষ্টি হবে না।' কাঁকড়া জিজ্ঞেস করল, 'এটা তোমাকে কে বলেছে?'
বগলা বলল- 'একজন জ্যোতিষী আমাকে এটা বলেছেন। এমনিতেই এই পুকুরে পানি কম। বাকি পানিও শীঘ্রই শুকিয়ে যাবে। পুকুরটি শুকিয়ে গেলে এতে বসবাসকারী প্রাণীরাও মারা যাবে। সেজন্য আমার মন খারাপ।'
কাঁকড়াটি তার সঙ্গীদের বগলা সম্পর্কে এই কথা বলেছিল। তারা সকলেই হরিণের কাছে পৌঁছে গেল। সে বগলাকে জিজ্ঞেস করল- 'মা, এমন একটা উপায় বলুন, যাতে আমরা সবাই রক্ষা পাই।' বগলা বলল- 'এখান থেকে কিছু দূরে একটা বড় হ্রদ আছে। সেখানে গেলে আপনার জীবন বাঁচানো যায়।' সবাই একসাথে জিজ্ঞেস করলো- 'সে লেকে আমরা কিভাবে পৌঁছব?' ধূর্ত বগলা বলল- 'আমি এখন বৃদ্ধ। তুমি যদি চাও, আমি তোমাকে পিঠে তুলে ঐ পুকুরে নিয়ে যেতে পারি।'
সবাই বগলের পিঠে উঠে অন্য পুকুরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হল। দুষ্ট বগলা প্রতিদিন একটি করে মাছ পিঠে নিয়ে সন্ধ্যায় পুকুরে ফিরে যেত। এভাবে তার খাবারের সমস্যা মিটে গেল। একদিন কাঁকড়া বলল- 'মামা, এখন আমার জীবনও বাঁচাও।' বগলা ভাবল সে প্রতিদিন মাছ খায়। আজ কাঁকড়ার মাংস খাবে। এই ভেবে সে কাঁকড়াটিকে তার পিঠে বসিয়ে দিল। উড়তে উড়তে সে একটা বড় পাথরের উপর পড়ল যেখানে সে প্রতিদিন মাছ খেতেন। সে বগলাকে জিজ্ঞেস করল- 'মা, লেকটা কতদূর? তুমি অবশ্যই ক্লান্ত. কাঁকড়াকে বোকা ভেবে বগলা উত্তর দিল- 'ওহ, কী হ্রদ! আমি আমার খাবার সম্পর্কে এটাই ভেবেছিলাম। এখন তুমিও মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হও। এই পাথরে বসে তোমাকে খাব।' একথা শুনে কাঁকড়াটি হরিণের গলা চেপে ধরে তার ধারালো দাঁত দিয়ে কামড় দিল। বগলা সেখানেই মারা গেল। মাছটি তাকে দেখে জিজ্ঞেস করল- 'আরে কাঁকড়া ভাই, তুমি ফিরে এলে কী করে? মামাকে রেখে কোথায় গেলি? আমরা শুধু তার জন্য অপেক্ষা করছি. একথা শুনে কাঁকড়া হাসতে লাগল। তিনি বললেন- 'ওই বগলা ছিল গোঁড়া। সে আমাদের সবার সাথে প্রতারণা করেছে। তিনি আমাদের সঙ্গীদের কাছের একটি পাথরে নিয়ে গিয়ে খেতেন। আমি সেই ধূর্ত বগলাকে হত্যা করেছি। এখন ভয়ের কিছু নেই। তাই বলা হয় যার বুদ্ধি আছে, তার শক্তিও আছে।'
