ভালুক লেজ
ভালুকের লেজ
ভাল্লুকের একসময় উজ্জ্বল লম্বা লেজ ছিল, কিন্তু এখন আর নেই। বেচারা ভালুক। কারো দৃষ্টিকোণ থেকে কাজ করলেই কাজ নষ্ট হয়। ভালুক যদি শিয়ালের বিন্দুতে না আসত তাহলে কি ভালো হতো?
অনেক দিন আগে ভালুকের লম্বা এবং চকচকে লেজ ছিল। ভালুক ভাই এই নিয়ে খুব গর্বিত ছিল। সবাইকে জিজ্ঞেস করতো আজ আমার লেজ কেমন লাগছে?
এখন কেন কেউ ভালুকের সাথে ঝামেলা করবে? তার বড় বড় আকৃতি আর নখর দেখে সবাই বলতো- খুব সুন্দর, খুব সুন্দর। ভালুক এটা দেখে নড়ছে না। যারা এটা বলে তারা এটাও বলবে যে ভাল্লুকের লেজের চেয়ে কারো লেজ সুন্দর নয়। শুধু, ভালুক সারাদিন তার লেজ-প্রশংসা শুনত।
এক সময় ঠান্ডার দিনে খুব ঠান্ডা পড়ত। এতটাই যে হ্রদ এবং পুকুর সব জমে গেল। শিকার খুঁজে পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে। এমন অবস্থায় ভাল্লুকটি তার সুন্দর লেজ নিয়ে একটি হ্রদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল, এমন সময় তার চোখ পড়ে সেখানে বসে থাকা একটি শেয়ালের ওপর। শেয়ালের কাছে মাছের স্তূপ ছিল। এটা দেখে ভাল্লুকের মুখে জল এসে গেল।
শিয়ালটি চালাক ছিল। তিনি বুঝতে পারলেন যে ভাল্লুকটি ক্ষুধার্ত এবং মাছটিকে দেখে তার দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে গেছে। ভালুক বলল- কেমন আছো শেয়াল বোন? এত মাছ কোথা থেকে পেলে?
শেয়াল এই লেকের প্রতি চতুরতা দেখিয়েছিল, শেয়াল বলল, হিমায়িত হ্রদে একটি গর্ত দেখিয়ে। ভাল্লুকও কম ছিল না। তিনি বললেন, কিন্তু তোমার কাছে মাছ ধরার হুক নেই? শেয়াল বলল, এই সব মাছ আমি আমার লেজের সাহায্যে ধরেছি।
ভাল্লুক অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল- কি বললে, এই মাছগুলো তোমার লেজ ধরে ধরেছ।
শেয়াল উত্তর দিল- হ্যাঁ ভাই, এতে আশ্চর্যের কি আছে। মাছ ধরার জন্য যে কোনো কাঁটার চেয়ে লেজ ভালো। ভালুক বলল- আমাকেও শিখিয়ে দাও।
শিয়াল বলল- এই লেকে যত মাছ ছিল সব ধরেছি, চল অন্য লেকে যাই।
শিয়াল আর ভাল্লুক অন্য হ্রদের দিকে এলো। অন্য লেকটি সম্পূর্ণ বরফ হয়ে গেছে। ভালুক তার ধারালো নখর দিয়ে সাথে সাথে সেখানে একটি গর্ত তৈরি করে। এখন কি করতে হবে ভালুক জিজ্ঞেস করল।
ফক্স বলল- এখন তোমার লেজ গর্তে রেখে বসো। মাছ ধরার সাথে সাথে আপনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে জানতে পারবেন। তবে হ্যাঁ, খুব বেশি নড়াচড়া করবেন না এবং কেবল মাছের কথাই ভাববেন না।
আপনি যত বেশি মাছের কথা ভাবেন, তত বেশি মাছ ধরতে পারবেন। ভালুকও তাই করল। সে শেয়ালকে বলল- দেখো, আমার লেজে বেশির ভাগ মাছই আটকে যাবে। শেয়াল বলল, এটা খুব ভালো কথা। আমি দূর থেকে দেখছি যাতে সবকিছু ঠিকঠাক হয়। আমি আপনার সাথে থাকলে, আপনার মনোযোগ বিভক্ত হবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে বসে বসে বিরক্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। খুব ঠান্ডা ছিল এবং তুষার পড়তে শুরু করে। শেয়াল ধীরে ধীরে তার ঘরে গেল। কিছুক্ষণ পর শেয়াল ফিরে এলে দেখা গেল ভাল্লুক ঘুমাচ্ছে। তার শরীরে বরফ জমে গেছে। কালো ভালুক সাদা হয়ে গেল। শেয়াল অনেক হাসল এবং তারপর ভালুককে জাগিয়ে দিল।
ভালুক ভাই, ভাল্লুক ভাই, এইমাত্র তোমার লেজে একটা মাছ আটকে থাকতে দেখলাম, তাড়াতাড়ি উঠ। ভালুক আতঙ্কে উঠে গেল। গর্ত থেকে লেজ বের করে দেখলেন লেজ নেই। আরে, আমার লেজ কোথায় গেল? আমার সুন্দর লেজ কোথায় গেল? এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলেন শিয়াল হাসছে। এখন ভালুকের লম্বা লেজের পরিবর্তে একটি ছোট লেজ বাকি ছিল।
ভাল্লুক শেয়ালকে খুব খারাপ বলল। সেই থেকে ভাল্লুকের লেজ ছোট হয়েছে। তারপর থেকে আজ অবধি ভাল্লুকটি তার লেজের কথা মনে করে গর্জন করছে। যখনই একটি ভালুক গর্জন করে তখনই বুঝুন এটি তার লেজ হারিয়েছে। এদিন থেকে শেয়াল ও ভাল্লুকের মধ্যে কথাবার্তাও বন্ধ হয়ে যায়।
ভালুক তার বোকা লেজ হারিয়েছে। তাই বলা হয়, সৌন্দর্যে লজ্জিত হবেন না এবং বুদ্ধিমানের সাথে কাজ করুন।
