ব্যবসায়ীর সন্দেহ
ব্যবসায়ীর সন্দেহ
প্রাচীনকালে মানুষ ব্যবসা করার জন্য দূর-দূরান্তে ভ্রমণ করত এবং বছরের পর বছর দেশে ফিরত। কখনও কখনও কয়েক দশক পরেও। তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত না নিতে শেখায় সেই দিনের গল্প। একজন বণিক ব্যবসা করতে বিদেশে গেছে। সেখানে তার ব্যবসা খুব ভালো চলতে থাকে। সে টাকা রোজগারে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে যে সে সময়ের খবরই ছিল না। বাসায় পৌঁছাতে রাত হয়ে গেছে। ঘরের প্রধান দরজা বন্ধ কিন্তু বেডরুমের একটার জানালা দিয়ে আলো বেরোচ্ছিল। জানালা দিয়ে ভেতরে তাকাল সে। সে প্রায়ই যা দেখে তা বিশ্বাস করতে পারত না। পায়ের তলায় মাটি সরে যাচ্ছে অনুভব করতে লাগলেন। এমতাবস্থায় স্ত্রীর চরিত্র নিয়ে সন্দেহ থাকাটা অস্বাভাবিক ছিল না। বণিক ভাবতে লাগলেন যে এমন একজন মহিলার বাড়িতে থাকার যৌক্তিকতা কী হতে পারে। তিনি তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নেন যে স্ত্রী ও তার পাশে শুয়ে থাকা যুবককে হত্যা করার পর তিনি চুপচাপ ফিরে যাবেন এবং অন্যত্র বসতি স্থাপনের চেষ্টা করবেন। তারপর তিনি শোবার ঘরের দেয়ালে লক্ষ্য করলেন যেখানে একটি শ্লোক লেখা ছিল। বৃণুতে হি বিমর্ষ্যকারিনাম গুণলুদ্ধ স্বয়মেব সম্পাদঃ। যারা চিন্তাভাবনা করে তাদের গুণাবলী দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে সমস্ত ধরণের সম্পদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার কাছে আসে, তাকে সমৃদ্ধ করে। দরজা খোলার আগে স্ত্রী অনেক খোঁজখবর নিল এবং যখন সে পুরোপুরি নিশ্চিত হল যে তার স্বামীই দরজায় টোকা দিয়েছে, সে তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দিল।
স্বামীকে দেখে স্ত্রীর খুশির সীমা রইল না। তিনি তৎক্ষণাৎ যুবককে ঘুম থেকে জাগালেন এবং স্বামীকে বললেন, এটা তোমার ছেলে যার বয়স এখন বিশ বছর। আঠারো বছর আগে আপনি যখন বিদেশে গিয়েছিলেন, তখন বয়স দুই বছর। ভবতীরেকে বাবার চোখ থেকে অশ্রু ঝরতে লাগল। ছেলেকে মনেপ্রাণে ভালোবাসতেন। এখন ব্যবসায়ীর সংশয় কেটে গেল। জীবনের সমস্যা। হঠাৎ কিছু বিভ্রান্তি দেখা দিলে বা সমস্যা দেখা দিলে আমরা ঘাবড়ে যাই এবং সাথে সাথে প্রতিক্রিয়া দেখাই। এটি প্রায়শই সমস্যার উন্নতির পরিবর্তে আরও খারাপ করে। তাই পর্যাপ্ত আলোচনা ছাড়া আমাদের কখনই কোনো কাজ করা উচিত নয়। বলা হয়েছে তাড়াহুড়া করা শয়তানের কাজ। কোনো রোগের চিকিৎসার জন্য যেমন সঠিক রোগ নির্ণয় জরুরি, ঠিক তেমনি কোনো সমস্যা বা ভুল ধারণা থাকলে তা দূর করার জন্য যথেষ্ট আলোচনা হওয়া খুবই জরুরি।
