যে কূপ খনন করে সে পড়ে
যে একটি কূপ খনন করে সে পড়ে
রাজার প্রাসাদের সীমানা প্রাচীরের ভিতরে একজন উজির এবং একজন কাঠমিস্ত্রি থাকতেন। উজির ছেলে ও করিন্দের মধ্যে ছিল ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব। বয়সের কারণে আমরা দুজনে একসাথে পড়ালেখা করতাম। উজিরের নির্দেশে চাকরের ছেলে তার সব কাজ করত। উজিরকে চাচা বলে ডাকতেন। করিন্দের ছেলেকে সম্রাট খুব ভালোবাসতেন। সম্রাটের কোন সন্তান ছিল না। তাই করিন্দের পুত্রকে তিনি নিজের পুত্র মনে করতেন। সম্রাট তাকে প্রাসাদ ও দরবারে চলাফেরার পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। করিন্দের পুত্রের প্রতি সম্রাটের ভালোবাসা দেখে উজির খুব ঈর্ষান্বিত হলেন। উজির চেয়েছিলেন সম্রাট শুধু তার ছেলেকে ভালোবাসুক। যদি সম্রাট তার পুত্রকে দত্তক নেন, তাহলে সম্রাটের মৃত্যুর পর তার পুত্র সিংহাসনে বসবে। উজিরের ইচ্ছার বিপরীতে করিন্দের ছেলের প্রতি সম্রাটের ভালোবাসা বাড়তে থাকে। উজির ছেলেকে সম্রাট মোটেও পছন্দ করতেন না। তাই উজির করিন্দে ও তার ছেলের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েন।
উজির করিন্দের ছেলেকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। উজির করিন্দের ছেলেকে রুমাল ও টাকা দিয়ে মাংস আনতে বললেন। উজির করিন্দের ছেলেকে ভালো করে বুঝিয়ে বললেন, বাজারের রাস্তার মোড়ের দোকান থেকে মাংস আনতে হবে। করিন্দের ছেলে রুমাল আর টাকা নিয়ে বাজারের দিকে হাঁটা দিল। তিনি দেখলেন তার বন্ধু উজিরের ছেলেও সেখানে খেলছে। উজিরের ছেলে ভৃত্যের ছেলেকে বলল, তুমি আমার বাজি খেলো, আমি গিয়ে মাংস নিয়ে আসব। করিন্দের ছেলে তাকে টাকা ও রুমাল দিয়ে দোকানের ঠিকানা বলল। এভাবে উজিরের ছেলে মাংস আনতে গেল আর করিন্দের ছেলে বাজি খেলতে লাগল। উজিরের ছেলে দোকানদারকে টাকা ও একটি রুমাল দিল এবং তাতে মাংস বেঁধে দিতে বলল। কসাই রুমালের দাগ চিনতে পেরেছে। এই রুমালটি কসাইকে দেখিয়ে উজির বললেন, যে ছেলেটি এই রুমাল নিয়ে গোশত নিতে এসেছে, তুমি তাকে হত্যা কর। উজির করিন্দের ছেলেকে হত্যা করার জন্য কসাইকে টাকাও দিয়েছিলেন। কসাই আগে থেকেই ভেতরে চুল্লি জ্বালিয়ে সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। তারপর ছেলেটিও সেখানে গেল। কসাই সঙ্গে সঙ্গে ছেলেটিকে তুলে নিয়ে জ্বলন্ত চুল্লিতে ফেলে দিল। করিন্দের ছেলে বাজি খেলে বাড়ি যাচ্ছিল পথিমধ্যে একজন উজিরের দেখা পেল। করিন্দের ছেলে জিজ্ঞেস করল, 'চাচা, ভাই মাংস এনেছেন?' এ কথা শুনে উজিরের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল। তখন করিন্দের ছেলে বলল, চাচা ভাইয়া আমার কাছ থেকে রুমাল ও টাকা নিয়ে বললেন, তুমি আমার বাজি খেলো, আমি মাংস নিয়ে বাড়ি যাব। ভাইকে দোকানের ঠিকানাও বলে দিয়েছিলাম। উজিরের চোখের সামনে অন্ধকার নেমে এল এবং মুখ দিয়ে একটা কথাও বের হল না। ছেলের কথা মনে করে উজির তার বাড়িতে গেলেন। উজির বলছিলেন, যে অন্যের জন্য কূপ খনন করে, সে নিজেই তাতে পড়ে যায়। ক্রেডিট:- 'প্রবাদের গল্প'
