আড়াই দিনের রাজত্ব
আড়াই দিনের রাজত্ব
এক সময় বক্সারের ময়দানে হুমায়ুন ও শেরশাহ সুরির মধ্যে তুমুল যুদ্ধ চলছিল। যুদ্ধে হুমায়ুন বাজেভাবে পরাজিত হন এবং তিন দিক থেকেই শেরশাহ সুরির সেনাবাহিনী দ্বারা বেষ্টিত হন। হুমায়ুন প্রাণ বাঁচাতে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে গঙ্গার তীরে আসেন। হুমায়ুন তার ঘোড়াকে গঙ্গায় নামানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু সফল হননি। হুমায়ুন ভয় পেয়েছিলেন যে শত্রুসেনারা এখানে পৌঁছালে তাকে গ্রেফতার করা হবে। নিজাম খুব ভালো সাঁতারু ছিলেন। হুমায়ুন নিজামকে তার কষ্টের কথা জানান। নিজাম হুমায়ুনকে মুখোশের উপর শুইয়ে গঙ্গা পার করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু হুমায়ুন প্রথমে গঙ্গা পার হতে না চাইলেও পরে গঙ্গা পার হওয়ার আর কোন উপায় না দেখে নিজামের কথা মানতে হয়। নিজাম হুমায়ুনকে কিছুক্ষণের মধ্যে তার মুখোশের উপর শুইয়ে দিয়ে গঙ্গার ওপারে সাঁতার কাটতে বাধ্য করেন। নিজাম বললেন, 'জাহানপানা, তুমি যদি আমাকে কিছু দিতে চাও, তাহলে আমাকে আড়াই দিনের রাজত্ব দাও। তিনি নিজাম ভিশতির চুল কেটে, রাজকীয় পোশাক পরিয়ে তাকে সিংহাসনে বসিয়ে দিলেন। হুমায়ুন দরবারীদের উদ্দেশে বললেন, 'আজ থেকে তিনিই রাজা এবং তাঁর আদেশ পালন করতে হবে।' এই বলে হুমায়ুন সেখান থেকে চলে গেলেন।
হুমায়ুন চলে গেলে নিজাম সম্রাট উজিরকে বললেন, 'আমি টাকশালে যেতে চাই।' উজির নিজাম সম্রাটকে টাকশালে নিয়ে যান, যেখানে মুদ্রা তৈরি করা হয়েছিল। তিনি অবিলম্বে মুদ্রা তৈরি বন্ধ করে দেন এবং চামড়ার মুদ্রা তৈরির কাজ দ্রুত শুরু হয়। দিনে-রাতে চামড়ার মুদ্রা তৈরি হতে থাকে। চামড়ার মুদ্রা দিয়ে যাবতীয় লেনদেন করার নির্দেশ জারি করা হয়। বড় বড় শেঠদের চামড়ার কয়েন দিন, পুরনো কয়েন নিন এবং গলিয়ে দিন। আড়াই দিন অতিবাহিত হওয়ার পর নিজাম তার রাজকীয় পোশাক খুলে মুখোশ নিয়ে চলে গেলেন। যার হাতে সেই চামড়ার মুদ্রাও চলে যেত, সে বলত 'এটা আড়াই দিনের রাজ্যের বিস্ময়।'
শিক্ষা এই গল্প থেকে আমরা শিক্ষা পাই যে, সম্রাট (প্রশাসক) চাইলেই। একদিনে পুরো রাজ্যটাই বদলে যেতে পারে।
